করোনা ভাইরাসঃ দুঃসময়ে বাংলাদেশের পাশে ভারত
এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারে সাফল্যের দেখা মেলেনি। তবে এনিয়ে চলছে রাতদিন গবেষণা। কতদিন নাগাদ এই ওষুধ পাওয়া যাবে, তা-ও বলতে পারছেন না গবেষকরা। আর তাই করোনা ভাইরাসের মৃত্যু মিছিল রুখতে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে ‘বন্ধু’রাষ্ট্র ভারত।
এপ্রিলে প্রথম চালানে বাংলাদেশকে ৩০ হাজার সার্জিক্যাল মাস্ক ও ১৫ হাজার হেডকভার দিয়ে সহায়তা করেছে দেশটি। দ্বিতীয় চালানে করোনা চিকিৎসায় বাংলাদেশকে এক লাখ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেট এবং ৫০ হাজার জীবাণুমুক্ত সার্জিকাল ল্যাটেক্স গ্লাভস সমন্বিত জরুরি চিকিত্সা সরবরাহ করেছিল ভারত।
এই মুহূর্তে করোনার কারণে পুরো পৃথিবী বিপর্যস্ত। ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত। ভারত করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
৬ই মে বুধবার তৃতীয়বারের মত বাংলাদেশকে চিকিৎসা সহায়তার জন্য ৩০ হাজার আরটি-পিসিআর কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিট পাঠিয়েছে ভারত। বাংলাদেশ নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার শ্রীমতী রীভা গাঙ্গুলি দাশ এসব চিকিৎসা সরঞ্জাম পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডঃ এ. কে আবদুল মোমেনের কাছে হস্তান্তর করেন। ২৯ এপ্রিল ২০২০ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ফোনালাপে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে এই মহামারীটির প্রভাব হ্রাস করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহায়তায় ভারতের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলেন।
হাই কমিশনার জানান যে, এই আরটি-পিসিআর শনাক্তকরণ কিটগুলি ভারতের ‘মাই ল্যাব ডিসকভারি সলিউশন প্রাইভেট লিমিটেড’ দ্বারা উত্পাদিত এবং কোভিড-১৯ শনাক্তকরণের জন্য ভারতে বহুল ব্যবহৃত। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, বাংলাদেশ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই শনাক্তকরণ কিট প্রাপ্ত প্রথম অংশীদার দেশ যা এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতি ভারতের গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে। ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথমে’ নীতির অংশ হিসেবে এবং কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে একটি সহযোগিতামূলক আঞ্চলিক প্রচেষ্টার লক্ষ্যে ১৫ মার্চ ২০২০ ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী সার্ক নেতাদের নিয়ে একটি ভিডিও সম্মেলন করেছিলেন। এ অঞ্চলের প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে এসব চিকিৎসা সরঞ্জাম বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দেয়া হয়।
দুই দেশের মধ্যকার কালোত্তীর্ণ বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করে, বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন মহামারী সংক্রমণের পর তিন দফায় ভারতের সহায়তার প্রশংসা করেন এবং বলেন যে শনাক্তকরণ কিটগুলি বাংলাদেশে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে দেবে যা এই মুহূর্তে খুব প্রয়োজন।
সার্ক কোভিড-১৯ জরুরি তহবিলের আওতায় কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টায় সাহায্য করার উদ্দেশ্যে এই সহায়তা দেয়া হয়েছে। তাত্ক্ষণিক ব্যবহার উপযোগী এই পরীক্ষার কিটগুলি বাংলাদেশ সরকারকে ব্যাপকভাবে পরীক্ষা করার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে। আরটি-পিসিআর পরীক্ষার কিটগুলি বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (IEDCR) পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার কিটগুলি প্রয়োজনীয় তাপমাত্রায় সংরক্ষিত অবস্থায় ইন্ডিগোর একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশে নিয়ে আসার পর IEDCR-এ পাঠানো হয়।
সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিজেদের সেরা অনুশীলনগুলো বিনিময়ের জন্য ভারত ও বাংলাদেশের চিকিৎসক এবং অন্যান্য অংশীদারদের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্স করার প্রস্তুতিও চলছে। বন্ধু ও প্রতিবেশী হিসেবে প্রতিকূল সময়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত ভারত। সার্কভুক্ত দেশগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণে সৃষ্ট পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশাবাদী ভারত।